ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প: জীবনী ও বিতর্ক

ডোনাল্ড ট্রাম্প: ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট এবং ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি শপথ নেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই ট্রাম্প মার্কিন সমাজে একজন বিশিষ্ট ধনকুবের হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর বেশিরভাগ জীবন কেটেছে ব্যবসা ও বিনোদন জগতের সাথে যুক্ত থেকে। রাজনীতিতে তাঁর সরাসরি সম্পৃক্ততা খুব একটা দেখা যায়নি। অতীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা বললেও তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। তবে ২০১৫ সালের ১৫ জুন তিনি আচমকাই নিজের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা ঘোষণা করেন, যা অনেকেই ততটা গুরুত্ব দেননি এবং তাঁকে নিয়ে হাস্যরস করা হয়। কিন্তু ট্রাম্প নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে, একজন সফল ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদের রূপান্তর ঘটান। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে তিনি হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন। ট্রাম্পের বাবা ফ্রেড ট্রাম্প ছিলেন নিউইয়র্কের একজন বিশিষ্ট আবাসন ব্যবসায়ী এবং তাঁর মা মেরি ট্রাম্প ছিলেন স্কটিশ বংশোদ্ভূত। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ছোটবেলা থেকে দুরন্ত স্বভাবের কারণে তাঁকে নিউইয়র্ক মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে পড়ানো হয়। ১৯৬৮ সালে তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ারটন স্কুল থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং বাবার ব্যবসায় যোগ দেন। বাবার প্রতিষ্ঠানে তিনি ছোট পদ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন, বিশেষ করে হোটেল, ক্যাসিনো এবং গলফ কোর্সের ব্যবসায়। ট্রাম্প দীর্ঘদিন মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার স্পনসর ছিলেন এবং “দ্য অ্যাপ্রেন্টিস” নামের টিভি রিয়্যালিটি শো উপস্থাপনা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন রেসলিং ইভেন্টেও অংশ নেন। তাঁর ব্যবসায়িক জীবনে বেশ কয়েকবার দেউলিয়া ঘোষণা করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন আইনি ঝামেলায়ও জড়িয়ে পড়েন। ব্যক্তিগত জীবনে, ট্রাম্প তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এবং তাঁর পাঁচ সন্তান রয়েছে। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন চেক মডেল ইভানা, যাঁর সঙ্গে ১৯৯২ সালে বিচ্ছেদ হয়। দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসের সাথে ১৯৯৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ১৯৯৯ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। ২০০৫ সালে তিনি তৃতীয়বার মেলানিয়া ট্রাম্পকে বিয়ে করেন, যিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ফার্স্ট লেডি ছিলেন। ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যুক্ত ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি রিপাবলিকান পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন এবং তাঁর প্রচারনার সময় বিভিন্ন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। তাঁর মুসলিম অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা, জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকার, নারীদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যসহ বিভিন্ন মন্তব্য তাঁকে তীব্র সমালোচনার মুখে ফেলেছিল। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে অশালীন আচরণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে, তবুও তিনি দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে, যার তদন্ত এখনও চলছে। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তাঁর বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ এবং প্রশাসনের অস্থিরতা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতি যেমন গোলমেলে, তেমনি তাঁর অভ্যন্তরীণ নীতিরও নানান সংকট দেখা দিয়েছে। তবু তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পছন্দ করেন এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষত টুইটারে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে শিরোনাম হয়েছেন।

Read More
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

আমেরিকার নির্বাচন

 আমেরিকার নির্বাচন আমেরিকার নির্বাচন বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম আলোচিত ইভেন্ট। এর প্রভাব শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ নয়; এটি বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। প্রতি চার বছর অন্তর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমেরিকার নির্বাচন প্রক্রিয়া, নির্বাচনী কলেজের ভূমিকা, কমলা হ্যারিসের মতো ব্যক্তিত্বের উত্থান, এবং এই প্রক্রিয়ার বিশ্বজুড়ে গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।  আমেরিকার নির্বাচনী প্রক্রিয়া আমেরিকার নির্বাচন দ্বিদলীয় ব্যবস্থার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, যেখানে প্রধান দুটি দল হলো ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান পার্টি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে: 1. প্রাইমারি নির্বাচন (Primary Election): এখানে প্রতিটি দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচিত হয়। প্রাথমিক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দল তার পছন্দের প্রার্থীকে নির্ধারণ করে, যারা সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। 2. কনভেনশন (Convention): প্রতিটি দল তার দলের কনভেনশনে তাদের মনোনীত প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। এখানে দলের প্ল্যাটফর্ম বা মতাদর্শও নির্ধারিত হয়। 3. সাধারণ নির্বাচন (General Election): সাধারণ নির্বাচনে জনগণ সরাসরি ভোট দেয়। তবে আমেরিকার নির্বাচন ব্যবস্থা সরাসরি গণভোটের ওপর নির্ভরশীল নয়। নির্বাচনী কলেজ নামে পরিচিত একটি ব্যবস্থা অনুযায়ী প্রতিটি রাজ্য তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ভোট প্রদান করে। 4. নির্বাচনী কলেজ (Electoral College): আমেরিকার নির্বাচনী কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রতিটি রাজ্য নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট পায়, যা তাদের জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০ ভোট পাওয়া প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।  মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রতি চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। বর্তমান প্রেসিডেন্ট পদে থাকা ব্যক্তি পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, যদি তারা একবারই প্রেসিডেন্ট থাকেন। তবে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ সীমাবদ্ধ থাকে দুটি মেয়াদে, যার মোট সময় আট বছর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যেখানে প্রার্থীরা কয়েক মাস ধরে প্রচার চালায় এবং জনগণের মন জয় করার চেষ্টা করে।  ২০২০ সালের নির্বাচন এবং কমলা হ্যারিস ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে এই নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল কমলা হ্যারিসের উপ-প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন। তিনি মার্কিন ইতিহাসে প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান হিসেবে এই পদে আসীন হন। কমলা হ্যারিসের এই অর্জন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা বাড়ানোর ক্ষেত্রে নতুন পথ উন্মোচন করেছে। আমেরিকার নির্বাচনের প্রভাব ও গুরুত্ব আমেরিকার নির্বাচন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। আমেরিকার রাজনৈতিক পরিবর্তন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া দুটি ভিন্ন ধরনের বৈশ্বিক প্রভাব তৈরি করেছে।  উপসংহার আমেরিকার নির্বাচন একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যা গণতন্ত্রের অন্যতম সফল উদাহরণ। এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা, নির্বাচনী কলেজের প্রভাব এবং প্রার্থীদের ব্যক্তিত্ব সবকিছুই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কমলা হ্যারিসের মতো ব্যক্তিত্বের উত্থান এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মার্কিন নির্বাচনের গুরুত্ব আমাদের এই প্রক্রিয়ার প্রভাবকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

Read More
মুহাম্মদ বিন সালমান

মুহাম্মদ বিন সালমান MBS – সৌদি যুবরাজ

মুহাম্মদ বিন সালমান, সৌদি আরবের বর্তমান যুবরাজ এবং দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একজন, বিশ্বের অন্যতম আলোচিত নেতা হিসেবে বিবেচিত। তিনি তার উচ্চাভিলাষী চিন্তাভাবনা, আধুনিক শাসন ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত জীবনধারার জন্য পরিচিত। মুহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে সৌদি আরব বিভিন্ন সংস্কার এবং আধুনিকীকরণের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্রবন্ধে তার পরিবার, শাসন ব্যবস্থার রূপান্তর, উচ্চাভিলাষী চিন্তাভাবনা এবং জীবনধারা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।    পিতা এবং মাতার নাম ও পরিবার : মুহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের বর্তমান রাজা, সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের পুত্র। তার পিতার শাসনামলে তিনি ক্রমাগত ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছেন এবং বর্তমানে সৌদি আরবের যুবরাজ হিসেবে কর্মরত। তার মায়ের নাম ফাহদা বিনতে ফালাহ আল হিতালাইন। ফাহদা বিনতে ফালাহ আল হিতালাইন সৌদি বেদুইন আদিবাসীর একটি বংশের অন্তর্ভুক্ত এবং তার নিজস্ব শিকড় রয়েছে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের সঙ্গে। মুহাম্মদ বিন সালমানের পরিবারে তার বেশ কয়েকজন ভাইবোন রয়েছে। তার পাঁচজন ভাই এবং তিনজন বোন রয়েছে। তবে মুহাম্মদ বিন সালমান সৌদি রাজ পরিবারের অভ্যন্তরে এবং বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছেন।  শৈশব এবং শিক্ষা : মুহাম্মদ বিন সালমানের শৈশব তার পিতার ঘনিষ্ঠ তত্ত্বাবধানে কেটেছে। তিনি শৈশব থেকে রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সামরিক কৌশল শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা সৌদি আরবেই সম্পন্ন হয়, যেখানে তিনি উচ্চতর মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন। তিনি রিয়াদের কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তার শিক্ষা এবং পারিবারিক পরিবেশ তাকে শৈশব থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলী শিখিয়েছে। রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী হিসেবে তার দায়িত্বের কথা ভেবেই তাকে ছোটবেলা থেকেই কঠোর নিয়ম-কানুন মেনে বড় হতে হয়েছে।  রাজনৈতিক উত্থান এবং শাসন ব্যবস্থা: মুহাম্মদ বিন সালমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় খুব দ্রুত। ২০১৫ সালে, তার পিতা সালমান বিন আবদুলআজিজ আল সৌদ সৌদি আরবের রাজা হন। এর পরপরই মুহাম্মদ বিন সালমান গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি দেশটির ডি ফ্যাক্টো শাসক হিসেবে পরিচিত হন। তিনি বর্তমানে সৌদি আরবের ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের প্রধান।  উচ্চাভিলাষী চিন্তাভাবনা : মুহাম্মদ বিন সালমানের উচ্চাভিলাষী চিন্তাভাবনার পরিচয় মেলে তার “ভিশন ২০৩০” পরিকল্পনা থেকে। এই পরিকল্পনা সৌদি আরবের অর্থনৈতিক ও সামাজিক আধুনিকীকরণের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি মূলত দেশের তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বহুমুখী অর্থনীতি তৈরি করা, সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা, এবং সৌদি সমাজের সংস্কার আনতে উদ্দীপ্ত।   ভিশন ২০৩০ এর প্রধান লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে:   অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য: সৌদি আরবের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে তেলের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু মুহাম্মদ বিন সালমান এই নির্ভরতা কমিয়ে বহুমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চান, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। এর মধ্যে রয়েছে পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি, এবং বিনোদন শিল্পের উন্নয়ন। নারীর অধিকার ও সামাজিক সংস্কার: মুহাম্মদ বিন সালমান নারী অধিকার এবং সামাজিক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তার শাসনামলে নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছে, এবং তাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নারীর কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটন এবং বিনোদন শিল্পের প্রসার: মুহাম্মদ বিন সালমান দেশের বিনোদন এবং পর্যটন খাতের প্রসার ঘটিয়েছেন। তিনি পর্যটনের জন্য সৌদি আরবকে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছেন, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করা হবে। ইতিমধ্যে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক স্থাপত্য এবং বিনোদনমূলক কার্যক্রমে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। শাসন ব্যবস্থা : মুহাম্মদ বিন সালমানের শাসন ব্যবস্থা তার কঠোর এবং উদ্ভাবনী নেতৃত্বের পরিচয় দেয়। তিনি দেশের নিরাপত্তা, অর্থনীতি, এবং সামাজিক সংস্কার নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি আধুনিকীকরণ এবং উদারপন্থী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তার শাসনকাল কঠোরতার জন্যও পরিচিত।   রাজনৈতিক কঠোরতা:    যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান তার শাসনামলে রাজ পরিবারের ভেতরে এবং বাহিরে অনেক বিরোধিতা মোকাবেলা করেছেন। তবে তিনি তার ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং সংস্কারের জন্য বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, তার কঠোর শাসন পদ্ধতি ক্ষমতা সংহত করার প্রচেষ্টার অংশ। বৈদেশিক নীতি:    মুহাম্মদ বিন সালমানের বৈদেশিক নীতি বিশেষত ইয়েমেন যুদ্ধ এবং ইরান-বিরোধী কার্যকলাপের জন্য সমালোচিত হয়েছে। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়। ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের উত্তেজনা বাড়তে থাকলেও তিনি এই সংঘাতকে প্রশমিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।   আধুনিকীকরণ এবং প্রগতিশীলতার মিশ্রণ:    মুহাম্মদ বিন সালমানের শাসন ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের সঙ্গে রক্ষণশীল মূল্যবোধের মিশ্রণ তৈরি করে। তিনি ইসলামী শাসন ব্যবস্থা বজায় রেখে দেশকে আধুনিকায়নের পথে নিয়ে যেতে চান। তিনি এমন এক শাসন কাঠামো তৈরি করেছেন যেখানে দেশীয় আইন এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সুযোগের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা যায়।  লাইফস্টাইল এবং ব্যক্তিগত জীবন মুহাম্মদ বিন সালমান একজন রাজকীয় জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তার ব্যক্তিগত জীবনধারা খুবই বিলাসবহুল এবং তা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।    বিলাসবহুল জীবনযাত্রা :   সৌদি যুবরাজের ব্যক্তিগত জীবন অত্যন্ত গোপনীয় হলেও, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার খবর প্রায়ই আসে। মুহাম্মদ বিন সালমান বিশ্বের সবচেয়ে দামী বাড়ি, নৌযান এবং অন্যান্য বিলাসবহুল সামগ্রী ক্রয় করেছেন বলে শোনা যায়। ২০১৫ সালে তিনি প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারে একটি বিলাসবহুল ফরাসি প্রাসাদ কিনেছিলেন। এছাড়া তার একটি অত্যন্ত মূল্যবান ইয়ট রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার।    পরিবারিক জীবন :   মুহাম্মদ বিন সালমান বিবাহিত এবং তার পরিবারের সদস্যরা মূলত রাজনৈতিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত নয়। তিনি প্রায়ই তার স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে সময় কাটান। যুবরাজের পরিবারে চার সন্তান রয়েছে, এবং তিনি তাদেরকে ধর্মীয় এবং সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে বড় করতে চান।    বাণিজ্যিক মূল্য :   মুহাম্মদ বিন সালমান শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং সৌদি আরবের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম নীতিনির্ধারক। তার বাণিজ্যিক মূল্য এবং সৌদি আরবের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা বিশ্বব্যাপী পরিচিত।    আরামকো এবং সৌদি আরবের অর্থনীতি :   মুহাম্মদ বিন সালমানের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রকল্প হলো সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি “আরামকো”। এই কোম্পানির শেয়ার বাজারে প্রবেশ করানো এবং দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে, আরামকো তার প্রাথমিক পাবলিক অফারিং (আইপিও) চালু করেছিল, যা তাকে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি করে তোলে।  ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং বিনিয়োগ    

Read More