ইলন মাস্ক, সরকারের ২ লাখ কোটি ডলার সাশ্রয়ে নিয়োজিত হতে যাচ্ছেন
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করে ইলন মাস্ক বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন, আর সেই বাজিতে তিনি জয়ী হয়েছেন। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর, এবার বিশ্বের শীর্ষ ধনী এই ব্যবসায়ী পরবর্তী প্রশাসনে একটি বড় দায়িত্ব পেতে চলেছেন। মাস্ক সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সংস্কার আনার উদ্দেশ্যে একটি নতুন বিভাগের নেতৃত্ব দেবেন। নির্বাচনের আগেই মাস্ক বলেছিলেন, নতুন গঠিত ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগ’ কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে ২ লাখ কোটি ডলার সাশ্রয় করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলেও মাস্ক নিজেও ব্যবসার ক্ষেত্রে সব সময় অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী। নতুন এই বিভাগের ব্যাপারে এখনও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তবে প্রশ্ন উঠছে, মাস্ক কীভাবে এই সরকারি সংস্থার নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি স্পেসএক্স ও টেসলার মতো বিশাল কোম্পানিগুলো চালাবেন। এছাড়াও তাঁর অন্যান্য ব্যবসা, যেমন এক্স-এর মতো উদ্যোগ রয়েছে। অন্যদিকে, মাস্কের বেশিরভাগ ব্যবসা কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই উদ্বেগ বাড়ছে যে, সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত কীভাবে তিনি মোকাবিলা করবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ঘোষণায় বলেছেন, মাস্ক ও তাঁর ধনী সহযোগী বিবেক রামাস্বামী এই নতুন বিভাগে যৌথ নেতৃত্ব দেবেন এবং সরকারের বাইরে থেকে উপদেশ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। একজন রিপাবলিকান প্রার্থীকে সমর্থন করা এবং তাকে নির্বাচনে জেতাতে সাহায্য করা মাস্কের জন্য একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া ৫৩ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তা একসময় ইলেকট্রিক গাড়ি শিল্পের উদীয়মান মুখ ছিলেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রায়ই সোচ্চার হয়েছেন। ২০১৭ সালে ট্রাম্প যখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন, তখন প্রতিবাদস্বরূপ মাস্ক প্রেসিডেন্টের দুটি পরামর্শক পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তবে এখন, কয়েক বছর পর, তিনি ট্রাম্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেলিব্রিটি সমর্থকদের একজন। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পকে জেতানোর জন্য মাস্ক ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছেন, যা তাঁর বিশাল সম্পদের তুলনায় তুলনামূলকভাবে সামান্য। এক্সে তাঁর ২০০ মিলিয়নেরও বেশি অনুসারীর সঙ্গে তিনি ট্রাম্পের পক্ষে বার্তা পৌঁছানোর পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসন ও ভোট সংক্রান্ত বিভিন্ন অপতথ্যও প্রচার করেছেন। এখন দেখার বিষয় হলো, মাস্ক এবং ট্রাম্পের মতো দুই আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিত্ব কতদিন একসঙ্গে কাজ করতে পারবেন। ইলন মাস্কের জন্ম ১৯৭১ সালের ২৮ জুন প্রিটোরিয়ায়। তাঁর পিতা ছিলেন প্রকৌশলী এবং মা কানাডায় জন্ম নেওয়া একজন মডেল। কিশোর বয়সে মাস্ক দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অন্টারিওতে চলে আসেন এবং কুইনস ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। পরে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ায় পদার্থবিজ্ঞান ও ব্যবসায় স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন, তবে পড়াশোনা শেষ না করে জিপ২ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি এই কোম্পানি ৩০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি দামে বিক্রি করেন এবং ৩০ বছর বয়সের আগেই মিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠেন। মাস্কের পরবর্তী উদ্যোগ ছিল এক্স ডটকম, যা পরে পেপালের সঙ্গে মিলে যায়। ২০০২ সালে ইবে পেপালকে ১.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়। এরপর মাস্ক আরও উচ্চাভিলাষী প্রকল্পে জড়িত হন। ২০০২ সালেই তিনি স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে তিনি বর্তমানে প্রধান নির্বাহী ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা। ২০০৪ সালে তিনি টেসলার চেয়ারম্যান হন এবং বর্তমানে তিনি মঙ্গল গ্রহে মানুষের উপনিবেশ স্থাপনের পরিকল্পনায় কাজ করছেন। তাঁর পরিকল্পিত স্টারশিপ মহাকাশযান মানুষ ও মালামাল চাঁদ, মঙ্গল গ্রহ এবং আরও দূরবর্তী স্থানে নিয়ে যাবে। মাস্কের মার্কিন, কানাডীয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনি তিনবার বিয়ে করেছেন এবং ১২ সন্তানের জনক, যার মধ্যে একজন শিশু বয়সে মারা গেছে।