ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ : মাসকট, ভেন্যু এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফিফা বিশ্বকাপ এবং ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাস: অতীতের বিজয়ী, রানার্স-আপ এবং অন্যান্য তথ্য ফিফা বিশ্বকাপ হল একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা যা প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়, তবে ১৯৪২ এবং ১৯৪৬ সালে এটি অনুষ্ঠিত হয়নি। মূল জুলেস রিমে ট্রফি ১৯৮৩ সালে চুরি হয়েছিল এবং এখনও পর্যন্ত তা উদ্ধার করা হয়নি। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর, ফিফা বিশ্বকাপ (FIFA World Cup), যা প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়, ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি বড় উৎসব। প্রতিটি বিশ্বকাপেই নানা ধরনের উত্তেজনা, প্রতিযোগিতা এবং শো-ডাউন হয়ে থাকে। এ লেখায় ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ সম্পর্কিত সব তথ্য, যেমন কোথায় হবে, বাছাই পর্বের সময়সূচি, মাসকট, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। ফিফা বিশ্বকাপ কি? ফিফা বিশ্বকাপ হল একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা, যা ফিফা (FIFA) দ্বারা আয়োজিত হয়। এটি পুরুষ ফুটবলের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা এবং প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকাপের ইতিহাস ১৯৩০ সালে শুরু হলেও, এর গুরুত্ব এবং জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। বিশ্বকাপ মাসকট কি? বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরের একটি নিজস্ব মাসকট থাকে, যা সেই বছরের বিশ্বকাপের প্রতীক হয়ে থাকে। মাসকট সাধারণত একটি প্রাণী বা চরিত্রের আকারে হয়, এবং এটি বিশ্বকাপের উদ্বোধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইভেন্টে উপস্থিত থাকে। ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপ-এর মাসকট সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে এটি কিছু মাস আগে ঘোষণা করা হবে। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তিনটি দেশের সম্মিলিত উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে। এই তিনটি দেশ হল: যুক্তরাষ্ট্র (USA) কানাডা (Canada) মেক্সিকো (Mexico) এই তিন দেশের মধ্যে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে, এবং এটি হবে বিশ্বের প্রথম বিশ্বকাপ যা ৩টি দেশে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ হবে ২৪টি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম বিশ্বকাপ। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ সময়সূচি ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ – এর বাছাই পর্ব শুরু হবে বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রতি অঞ্চলের দেশগুলো তাদের স্থান পাকা করার জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিবে। এই বাছাই পর্বের সময়সূচি এবং নিয়মের কিছু বিশদ: এশিয়া (AFC): এশিয়া অঞ্চলের বাছাই পর্ব শুরু হবে ২০২৪ সালের মধ্যে, যেখানে এশিয়ান দেশগুলোকে প্রথম পর্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে খেলা হবে। ইউরোপ (UEFA): ইউরোপে বাছাই পর্ব ২০২৪ সালের মধ্যে শুরু হবে এবং এতে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের স্থান নির্ধারণ করবে। দক্ষিণ আমেরিকা (CONMEBOL): দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাই পর্বও ২০২৪ সালের মধ্যে শুরু হবে। উত্তর ও মধ্য আমেরিকা (CONCACAF): ২০২৪ সালেই শুরু হবে, এবং এখানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো সহ অন্যান্য দেশগুলো অংশ নিবে। আফ্রিকা (CAF) এবং ওশেনিয়া (OFC)-এর বাছাই পর্বও একই সময়ে শুরু হবে। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ বাছাইপর্ব তালিকা ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে প্রতি অঞ্চলের দলগুলোকে নির্দিষ্ট পর্বে খেলতে হবে। এই বাছাই পর্বে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকারী দলগুলি ফাইনালে উঠে আসবে। যেমন: এশিয়া থেকে ৪.৫টি দল ইউরোপ থেকে ১৩টি দল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ৪.৫টি দল উত্তর ও মধ্য আমেরিকা থেকে ৩.৫টি দল আফ্রিকা থেকে ৫টি দল ওশেনিয়া থেকে ০.৫টি দল এছাড়া, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলের দলগুলি প্লে-অফে অংশ নিতে পারে। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ কয়টি দেশে অনুষ্ঠিত হবে? ফিফা বিশ্বকাপ ( FIFA WORLD CUP) ২০২৬ হবে তিনটি দেশে: যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, এবং মেক্সিকো। এর ফলে, ২০২৬ বিশ্বকাপ হবে বিশ্বের প্রথম ত্রিদেশীয় বিশ্বকাপ, এবং এটি ফুটবল ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করবে। এখানে ১৯৩০-২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ বিজয়ীদের তালিকা: ২০২২: বর্তমান ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি প্রদান করা হয়। ২০১৮: ফ্রান্স ক্রোয়েশিয়াকে ৪–২ হারিয়ে বিজয়ী হয়। ২০১৪: জার্মানি আর্জেন্টিনাকে ১–০ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ২০১০: স্পেন নেদারল্যান্ডসকে ১–০ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ২০০৬: ইতালি ফ্রান্সকে ১–১ ড্র পরেও পেনাল্টিতে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ২০০২: ব্রাজিল জার্মানিকে ২–০ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ১৯৯৮: ফ্রান্স ব্রাজিলকে ৩–০ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ১৯৯৪: ব্রাজিল ইতালিকে ৩–২ পেনাল্টিতে হারিয়ে বিজয়ী হয়। ১৯৯০: জার্মানি আর্জেন্টিনাকে ১–০ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ১৯৮৬: আর্জেন্টিনা জার্মানিকে ৩–২ হারিয়ে বিজয়ী হয়। ১৯৮২: ইতালি জার্মানিকে ৩–১ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ১৯৭৮: আর্জেন্টিনা নেদারল্যান্ডসকে ৩–১ হারিয়ে বিজয়ী হয়। ১৯৭৪: জার্মানি নেদারল্যান্ডসকে ২–১ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ১৯৭০: ব্রাজিল ইতালিকে ৪–১ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ১৯৬৬: ইংল্যান্ড জার্মানিকে ৪–২ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ১৯৬২: ব্রাজিল চেকোস্লোভাকিয়াকে ৩–১ হারিয়ে বিজয়ী হয়। ১৯৫৮: ব্রাজিল সুইডেনকে ৫–২ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ১৯৫৪: জার্মানি হাঙ্গেরিকে ৩–২ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ১৯৫০: উরুগুয়ে ব্রাজিলকে ২–১ হারিয়ে বিজয়ী হয়। ১৯৩৮: ইতালি হাঙ্গেরিকে ৪–২ হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে। ১৯৩৪: ইতালি চেকোস্লোভাকিয়াকে ২–১ হারিয়ে বিজয়ী হয়। ১৯৩০: উরুগুয়ে আর্জেন্টিনাকে ৪–২ হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জেতে। ফিফার সভাপতিদের তালিকা: ফিফা (FIFA) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯০৪ সালে, এবং এর ইতিহাসে একাধিক সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। এখানে ফিফার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের তালিকা দেওয়া হল: রবার্ট গুয়েরিন (Robert Guérin) দায়িত্বকাল: ১৯০৪–১৯০৬ দেশ: ফ্রান্স ফিফার প্রথম সভাপতি, যিনি ফিফার শুরুর দিকের সাংগঠনিক ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ড্যানিয়েল বার্লি উলফল (Daniel Burley Woolfall) দায়িত্বকাল: ১৯০৬–১৯১৮ দেশ: ইংল্যান্ড ফিফার দ্বিতীয় সভাপতি, যিনি ফিফার নিয়ম-কানুনকে আধুনিকায়িত করার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন। জুলেস রিমে (Jules Rimet) দায়িত্বকাল: ১৯২১–১৯৫৪ দেশ: ফ্রান্স ফিফার দীর্ঘতম সময়ের সভাপতি এবং ফুটবল বিশ্বকাপের প্রবর্তক। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৩০ সালে প্রথম ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়। রুডোলফ সেল্ড্রেয়ার্স (Rodolphe Seeldrayers) দায়িত্বকাল: ১৯৫৪–১৯৫৫ দেশ: বেলজিয়াম ফিফার চতুর্থ সভাপতি, যিনি মাত্র এক বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করেন। আর্থার ড্রিউরি (Arthur Drewry) দায়িত্বকাল: ১৯৫৫–১৯৬১ দেশ: ইংল্যান্ড তাঁর নেতৃত্বে ফুটবল আরও বৈশ্বিক পরিসরে প্রসার লাভ করে। স্ট্যানলি রউস (Stanley Rous) দায়িত্বকাল: ১৯৬১–১৯৭৪ দেশ: ইংল্যান্ড ফিফার জনপ্রিয় সভাপতি, যিনি ফুটবলের আন্তর্জাতিকীকরণে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। জোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ (João Havelange) দায়িত্বকাল: ১৯৭৪–১৯৯৮ দেশ: ব্রাজিল হ্যাভেলাঞ্জের সময়ে ফিফা বাণিজ্যিক দিক থেকে বিশালভাবে প্রসারিত হয় এবং বিশ্বকাপের আয়োজন আরও বড় আকার ধারণ করে। সেপ ব্লাটার (Sepp Blatter) দায়িত্বকাল: ১৯৯৮–২০১৫ দেশ: সুইজারল্যান্ড ব্লাটারের নেতৃত্বে ফুটবল বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া ইভেন্টে পরিণত হয়, তবে তাঁর সময়ে ফিফার অভ্যন্তরে বেশ কিছু বিতর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ইস্যা হায়াতু (Issa Hayatou) দায়িত্বকাল: ২০১৫ (অন্তর্বর্তীকালীন) দেশ: ক্যামেরুন ফিফার অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে কিছু সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেন। জিয়ান্নি ইনফান্তিনো (Gianni Infantino) দায়িত্বকাল: ২০১৬–বর্তমান দেশ: সুইজারল্যান্ড বর্তমান সভাপতি, যিনি ফিফার নেতৃত্বে নতুন যুগের সূচনা করেছেন। তিনি বিশ্বকাপের দলে বাড়ানোর পরিকল্পনা সহ ফুটবলের বাণিজ্যিক ও সাংগঠনিক কাঠামোতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন। ফিফার এই সভাপতি ব্যক্তিরা ফুটবলকে একটি বৈশ্বিক ক্রীড়া ইভেন্টে রূপান্তরিত করতে বিশাল অবদান রেখেছেন। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক নতুন উদ্দীপনা ও উৎসবের দিন এনে দেবে। তিনটি দেশের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্বকাপ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে এবং ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট হিসেবে ইতিহাসে থাকবে। বাছাই পর্ব শুরু হতে কিছু সময় বাকি, তবে এর উত্তেজনা ইতিমধ্যেই ফুটবল বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের সেরা ফুটবল দল নিয়ে অংশগ্রহণ করবে। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ এর জন্য প্রস্তুত হয়ে যান,…