ডোনাল্ড ট্রাম্প: জীবনী ও বিতর্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প: ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট এবং ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি শপথ নেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই ট্রাম্প মার্কিন সমাজে একজন বিশিষ্ট ধনকুবের হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর বেশিরভাগ জীবন কেটেছে ব্যবসা ও বিনোদন জগতের সাথে যুক্ত থেকে। রাজনীতিতে তাঁর সরাসরি সম্পৃক্ততা খুব একটা দেখা যায়নি। অতীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা বললেও তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। তবে ২০১৫ সালের ১৫ জুন তিনি আচমকাই নিজের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা ঘোষণা করেন, যা অনেকেই ততটা গুরুত্ব দেননি এবং তাঁকে নিয়ে হাস্যরস করা হয়। কিন্তু ট্রাম্প নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে, একজন সফল ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদের রূপান্তর ঘটান। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে তিনি হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন। ট্রাম্পের বাবা ফ্রেড ট্রাম্প ছিলেন নিউইয়র্কের একজন বিশিষ্ট আবাসন ব্যবসায়ী এবং তাঁর মা মেরি ট্রাম্প ছিলেন স্কটিশ বংশোদ্ভূত। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ছোটবেলা থেকে দুরন্ত স্বভাবের কারণে তাঁকে নিউইয়র্ক মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে পড়ানো হয়। ১৯৬৮ সালে তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ারটন স্কুল থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং বাবার ব্যবসায় যোগ দেন। বাবার প্রতিষ্ঠানে তিনি ছোট পদ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন, বিশেষ করে হোটেল, ক্যাসিনো এবং গলফ কোর্সের ব্যবসায়। ট্রাম্প দীর্ঘদিন মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার স্পনসর ছিলেন এবং “দ্য অ্যাপ্রেন্টিস” নামের টিভি রিয়্যালিটি শো উপস্থাপনা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন রেসলিং ইভেন্টেও অংশ নেন। তাঁর ব্যবসায়িক জীবনে বেশ কয়েকবার দেউলিয়া ঘোষণা করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন আইনি ঝামেলায়ও জড়িয়ে পড়েন। ব্যক্তিগত জীবনে, ট্রাম্প তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এবং তাঁর পাঁচ সন্তান রয়েছে। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন চেক মডেল ইভানা, যাঁর সঙ্গে ১৯৯২ সালে বিচ্ছেদ হয়। দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসের সাথে ১৯৯৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ১৯৯৯ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। ২০০৫ সালে তিনি তৃতীয়বার মেলানিয়া ট্রাম্পকে বিয়ে করেন, যিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ফার্স্ট লেডি ছিলেন। ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যুক্ত ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি রিপাবলিকান পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন এবং তাঁর প্রচারনার সময় বিভিন্ন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। তাঁর মুসলিম অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা, জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকার, নারীদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যসহ বিভিন্ন মন্তব্য তাঁকে তীব্র সমালোচনার মুখে ফেলেছিল। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে অশালীন আচরণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে, তবুও তিনি দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে, যার তদন্ত এখনও চলছে। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তাঁর বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ এবং প্রশাসনের অস্থিরতা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতি যেমন গোলমেলে, তেমনি তাঁর অভ্যন্তরীণ নীতিরও নানান সংকট দেখা দিয়েছে। তবু তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পছন্দ করেন এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষত টুইটারে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে শিরোনাম হয়েছেন।